সফল আম উৎপাদনের জন্য,
আম গাছের মুকুলের যত্ন ও পরিচর্যা
আম গাছের মুকুলের যত্ন, কীটনাশক স্প্রে করার সময় ও পদ্ধতি, এবং সার প্রয়োগ:
আম বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ফল। একটি সুস্থ ও ভালো ফলনশীল আম গাছ পেতে হলে মুকুল আসা থেকে ফল পরিপক্ক হওয়া পর্যন্ত বিশেষ যত্ন নেওয়া জরুরি। মুকুলের সময় সঠিক যত্ন, কীটনাশক প্রয়োগ এবং সার ব্যবস্থাপনা একটি গাছের ফলন বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই ব্লগে আমরা আম গাছের মুকুলের সঠিক যত্ন, কীটনাশক ব্যবস্থাপনা ও সার প্রয়োগ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
আম গাছের মুকুল আসার প্রাথমিক লক্ষণ ও প্রয়োজনীয় যত্ন
আম গাছে সাধারণত জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মধ্যে মুকুল আসে। মুকুল আসার আগে এবং পরে গাছের পর্যাপ্ত যত্ন নেওয়া না হলে ফলন কমে যেতে পারে। কিছু প্রাথমিক লক্ষণ হলো:
গাছের শাখা থেকে ছোট ছোট ফুলের মুকুল দেখা যায়।
পাতার রং কিছুটা পরিবর্তন হতে শুরু করে।
আবহাওয়া শুকনো ও উষ্ণ হয়ে গেলে মুকুলের বৃদ্ধি দ্রুত হয়।
মুকুলের যত্নে করণীয়
- পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা:গাছের আশেপাশের আগাছা পরিষ্কার রাখুন। আগাছা রোগজীবাণু ছড়াতে সহায়তা করে।
- অতিরিক্ত শাখা ছাঁটাই:গাছে অতিরিক্ত শাখা থাকলে সেগুলো ছাঁটাই করুন। এটি আলো-বাতাসের প্রবেশ নিশ্চিত করে এবং মুকুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে।
- জল সরবরাহ:মুকুল আসার সময় গাছে নিয়মিত জল সরবরাহ করুন। তবে অতিরিক্ত জল দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
- পোকা ও রোগ প্রতিরোধ:মুকুলের সময় পোকামাকড়ের আক্রমণ বেশি হয়। তাই কীটনাশক ব্যবহার অত্যন্ত জরুরি।
আম গাছের মুকুলে কীটনাশক স্প্রে করার সময় ও পদ্ধতি
মুকুল আসার সময় বিভিন্ন প্রকার কীটপতঙ্গ ও ছত্রাকের আক্রমণ দেখা যায়। বিশেষ করে ছত্রাকজনিত রোগ (Anthracnose), পাউডারি মিলডিউ এবং থ্রিপস মুকুলের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে।
কীটনাশক স্প্রে করার উপযুক্ত সময়
মুকুল বের হওয়ার ৭ থেকে ১০ দিন পর প্রথম স্প্রে করুন।
দ্বিতীয় স্প্রে ফুল ফোটার পরে করুন।
তৃতীয় স্প্রে ফল ধরার পর প্রয়োগ করুন।
আবহাওয়ার পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রয়োজনে অতিরিক্ত স্প্রে করতে হতে পারে।
কীটনাশক স্প্রে করার পদ্ধতি
- সঠিক কীটনাশক নির্বাচন:
ছত্রাকনাশক হিসেবে ম্যানকোজেব বা কার্বেন্ডাজিম ব্যবহার করতে পারেন।
কীটনাশক হিসেবে ইমিডাক্লোপ্রিড বা থায়োমিথক্সাম ব্যবহার উপকারী।
- কীটনাশক মিশ্রণ:কীটনাশক প্রস্তুত করার আগে নির্দেশিকা ভালোভাবে পড়ুন। সঠিক মাত্রায় পানির সাথে মিশিয়ে স্প্রে করুন।
- স্প্রে করার সময়:
সকালে বা বিকেলের দিকে স্প্রে করুন, যখন তাপমাত্রা কম থাকে।
স্প্রে করার সময় মুখোশ ও গ্লাভস ব্যবহার করুন।
- মুকুলের পূর্ণ কভারেজ:গাছের মুকুলসহ প্রতিটি অংশে স্প্রে নিশ্চিত করুন।
আম গাছে মুকুল আসার পর সার প্রয়োগ পদ্ধতি
মুকুল আসার পর সঠিক সার প্রয়োগ আম গাছের ফলন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সুষম পুষ্টি সরবরাহ না করলে মুকুল ঝরে যেতে পারে বা ফলের আকার ছোট হতে পারে।
মুকুল আসার সময় প্রয়োজনীয় সার
- নাইট্রোজেন সার (ইউরিয়া):মুকুল আসার পর প্রায় ২০০-২৫০ গ্রাম ইউরিয়া প্রতি পূর্ণবয়স্ক গাছে প্রয়োগ করুন। এটি মুকুলের বৃদ্ধি বাড়ায়।
- ফসফরাস সার:ফসফরাস মুকুল ধরে রাখতে সহায়তা করে। প্রায় ২০০-৩০০ গ্রাম টিএসপি সার ব্যবহার করুন।
- পটাশ সার:পটাশ গাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং ফলের গুণগত মান উন্নত করে। প্রায় ২৫০-৩০০ গ্রাম এমওপি সার প্রয়োগ করুন।
- জৈব সার:মাটি শক্তিশালী ও উর্বর রাখতে জৈব সার যেমন গোবর সার প্রয়োগ করুন। প্রতি গাছে প্রায় ৫-৬ কেজি জৈব সার ব্যবহার উপকারী।
সার প্রয়োগের পদ্ধতি
- মাটি খুঁড়ে সার প্রয়োগ:গাছের চারপাশে ২০-৩০ সেন্টিমিটার গভীর করে মাটি খুঁড়ে সার প্রয়োগ করুন।
- জল প্রদান:সার দেওয়ার পর পর্যাপ্ত জল প্রদান করুন যাতে সার মাটিতে ভালোভাবে মিশে যায়।
- সার প্রয়োগের সময়:
মুকুল আসার সময় প্রথম পর্যায়ে সার প্রয়োগ করুন।
ফল ধরার পর আবার একটি পর্যায়ে সার দিন।
মুকুলের রোগবালাই প্রতিরোধে করণীয়
Acemix---------2ml/Litter Water
Cot10EC--------1ml/Litter Water
Fiter 2.5EC -----2ml/Litter Water
উপসংহার
আম গাছের মুকুল আসা থেকে ফল পরিপক্ক হওয়া পর্যন্ত সঠিক যত্ন ও ব্যবস্থাপনা গাছের ফলন নিশ্চিত করে। সঠিক সময়ে কীটনাশক স্প্রে, সুষম সার প্রয়োগ এবং নিয়মিত পরিচর্যা আমের মান ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এসব নির্দেশনা মেনে চললে একটি সুস্থ ও ফলনশীল আম গাছ পাওয়া সম্ভব।
0 Comments